শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন আনাচে কানাচে অবস্থিত কামাররা। দিনরাত সমান তালে ঠণ ঠণ আওয়াজে তারা এখন ছুরি, চাপাতি,দা,বটি তৈরী ও শান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কোরবানী ঈদ যতই এগিয়ে আসছে ততই যেত ব্যস্ত বেড়েই চলছে কামার ও ক্রেতাদের। ক্রেতারা তাদের পছন্দের ছুরি, চাপাতি, দা, কুড়াল, মাংস কাটার জন্য গাছের গুলের টুকরো কিনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর একটু কম সরঞ্জামাদি ও প্রয়োাজনীয় জিনিস পত্রাদি ক্রয় করছেন ক্রেতারা বলে জানান কামার ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কামাররা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঠণ,ঠণ আওয়াজে কাজ করে চলেছেন তারা। অনেকের হাতে বেশি অর্ডার থাকায় নতুন কোন অর্ডারও নিচ্ছেনা। সারা বছর কাজ না থাকলেও কোরবানীর ঈদের এ সময়টা বরাবরই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। পশু জবাইর সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন তাদের দোকানে। কামারের দোকান গুলোতে শোভা পাচ্ছে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু জবাইয়ের উপকরণ। প্রতি বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দা, ছুরি, চাপাতির ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়।
বানিয়াচং সদরের নতুনবাজার কলেজ রোডে অবস্থিত কামার ব্যবসায়ী কালিপদ কর্মকার ও কৃষ্ণ কর্মকার জানান, সারা বছর কাজ খুব কম থাকে কোরবানি এলে কাজ বেড়ে যায়। বর্তমানে ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরি শান দেয়ার জন্য ৩০টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের ভিত্তি করে ৫০ থেকে ৮০টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি দা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, ছোট ছুরি ৫০টাকা, টি ২০০ টাকা, চাপাতি ২৫০-৬০০ টাকা করে।
বাজারে পশু জবাইয়ের ছুরি কিনতে আসা পার্শ্ববর্তী আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম, প্রথমরেখ মহল্লার একরামুল ইসলাম ও জাতুকর্ণপাড়ার সেলিম মিয়াসহ কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানীর ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনার কাজটি সেরে ফেলছেন। তবে অন্যান বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, চাপাতির দাম একটু বেশী বলে জানান তারা। লোহার পাশাপাশি এদিকে স্টিলের ছুরি চাকুও লোকজনকে আকৃষ্ট করছে।
বড়বাজারে শাণ দেওয়া কামার মালেক কারিগরের কাছে শাণ দেওয়ার মজুরি জানতে চাইলে তিনি জানান, দা- ছুরি অনুযায়ী ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। তবে ঈদ ছাড়া অন্য সময় একটু কম রাখা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি। এদিকে যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শান দেন তাদের অবস্থা মোটামুটি ভাল বলে জানা গেছে। যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন তাদের একজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে তাদের কমবেশি সারা বছরই কাজ থাকে। কারণ মহিলাদের তো সারা বছরই দা-ছুরি দিয়ে কাজ করতে হয়।
অন্যদিকে নতুন সরঞ্জামাদি কেনা বেচা ও মেরামত করার একটু বেশি মূল্যের ধরার বিষয়ে কামার দোকানিদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, বর্তমানে কয়লার ও রাডের ব্যপক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদেরও মূল্য একটু বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এছাড়াও গত বছরের তুলনায় এবছরে তেমন কেনা বেচাও নেই। শুধু বছরে ঈদুল আজহার সময় ছাড়া তেমন কোন কাজ হয়না তাই একটু বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। তবে ক্রেতারা হাসি মুখেই তা মেনে নিচ্ছেন বলে জানান দোকানীরা।